জাতীয় শরিয়া কাউন্সিল

বাংলাদেশের ইসলামি সংগঠন

জাতীয় শরিয়া কাউন্সিল হলো বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় আলেমদের নিয়ে গঠিত একটি ঐক্য প্রয়াসী ইসলামি সংগঠন। ১৯৯৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর এটি গঠিত হয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব উবায়দুল হক এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশে ইসলামি শক্তিসমূহের ঐক্যের জন্য এটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কাউন্সিলের নীতি ছিল, "ইত্তেহাদ মাআল ইখতেলাফ" অর্থাৎ মতভেদ সহ ঐক্য। প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন দল ও সংগঠন, মতভেদ বহাল থাকলেও ইসলাম বিরোধী শক্তির মোকাবেলায় সকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।[১][২]

প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

বাংলাদেশে ইসলামি ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯৯৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ৬৩ জন নেতৃস্থানীয় আলেম ও বুদ্ধিজীবিকে নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আযীযুর রহমান কায়েদের সভাপতিত্বে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিল গঠনের স্বীদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব উবায়দুল হককে প্রধান আহ্বায়ক করে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন: উবায়দুল হক, আজিজুল হক, শাহ আহমদ শফী, আযীযুর রহমান কায়েদ, আব্দুস সুবহান, মুহিউদ্দীন খান, হারুন ইসলামাবাদী, ফজলুল হক আমিনী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রমুখ। সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দেদীকে প্রধান করে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের একটি লিয়াজোঁ কিমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন: সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দেদী, কামালুদ্দীন জাফরী, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, আখতার ফারুক, আতাউর রহমান খান, রুহুল আমিন খান প্রমুখ।[১]

কার্যক্রম

সম্পাদনা

বার্ষিক সম্মেলন, ২০০৩

সম্পাদনা

২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি মীরপুরস্থ দারুস সালামে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে পেশকৃত একটি রিপোর্ট অনুসারে ২০০০ সালের ১৬ অক্টোবর উবায়দুল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং নিম্নের প্রস্তাবসমূহ গৃহীত হয়:[১]

  1. পূর্বঘোষিত জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও লিয়াজোঁ কমিটির সকল সদস্যকে মূল কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
  2. সভায় মুহিউদ্দীন খানের প্রস্তাবক্রমে উবায়দুল হককে স্থায়ীভাবে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের সভাপতি মনোনীত করা হয়।
  3. সভায় মুহিউদ্দীন খানকে সহ-সভাপতি, সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দেদীকে মহাসচিব ও হারুনুর রশিদ খানকে যুগ্ম-মহাসচিব মনোনীত করা হয়।

আজিজুল হক, আব্দুল কাহহার সিদ্দীকি, শাহ আহমদ শফী, আযীযুর রহমান কায়েদ, আব্দুল মান্নান জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের পৃষ্ঠপোষক মনোনীত হন।

২০০১ সালের ১০ জুলাই পুরানা পল্টনে মুহিউদ্দীন খানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি মজলিসে আমেলা (কর্ম-পরিষদ) গঠিত হয়। মজলিসে আমেলার সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন: উবায়দুল হক, মুহিউদ্দীন খান, সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দেদী, আব্দুস সুবহান প্রমুখ।

২০০১ সালের ৯ আগস্ট উবায়দুল হকের সভাপতিত্বে শরীয়াহ কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রেডিও-টিভিতে ইসলামের বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার বন্ধ করা, ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, ভাস্কর্যের নামে মূর্তি নির্মাণ বন্ধ করা ও যে সকল আলেম জেলে রয়েছেন তাদেরকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

২০০২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মুহিউদ্দীন খানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিল বাংলাদেশের উদ্যোগে একটি জাতীয় ভিত্তিক ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এ জন্য সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দেদী, যাইনুল আবেদীন, আব্দুল কুদ্দুস ও আব্দুল লতিফ নিযামীর সমন্বয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।

২০০২ সালের ৩ নভেম্বর মুহিউদ্দীন খানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং খতিব উবায়দুল হকের বিশেষ দাওয়াতনামা নিয়ে ওলামাদের সাথে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উবায়দুল হক ও সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দিদীর স্বাক্ষরিত চিঠি নিয়ে ওলামাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়।

২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জাতীয় শরিয়া কাউন্সিল বাংলাদেশের জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন খতিব উবায়দুল হক। সম্মেলনে ৬৭ জন আলেম অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী ভাষণ দেন উবায়দুল হক। বিগত বছরের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশ করেন সেক্রেটারী জেনারেল সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দেদী। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন আবদুস সোবহান (এমপি), ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সহ-সভাপতি মুহিউদ্দিন খান। সম্মেলনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় এবং সারাবিশ্বের বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলিমদের সকল সমস্যার সমাধান ও কল্যাণের জন্য আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। উক্ত জাতীয় ওলামা সম্মেলনে উপস্থিত উলামাদের মধ্যে রয়েছেন: আজিজুল হক, কামাল উদ্দিন জাফরী, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, সুলতান যওক নদভী, আবদুল লতিফ নেজামী, জুলফিকার আহমাদ কিসমতি, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, আতাউর রহমান খান প্রমুখ।[১]

বার্ষিক সম্মেলন, ২০০৪

সম্পাদনা

২০০৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর মীরপুর দারুস সালামে জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের সভাপতি উবায়দুল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা আজিজুল হক। জাতীয় কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ তার বক্তব্যে আফগানিস্তানইরাক থেকে ইঙ্গ-মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। জাতীয় শরিয়া কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল সাঈদ আহমাদ মুজাদ্দেদী সকল ওলামাকে একত্রে বসে সব বিষয়ে সকল সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান। শাহতলীর পীর আবুল বাশারের মোনাজাতের মাধ্যমে সম্মেলন সমাপ্ত হয়।[১]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মোঃ কামরুল, হাসান (২০২১)। বিশ্ব মুসলিম ঐক্য : সমস্যা ও করণীয় (২০০০-২০১৫) (পিএইচডি)। বাংলাদেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৪৭–১৬০। ১৫ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২২ 
  2. আযম, গোলাম (২০০৬)। বাংলাদেশে ইসলামী ঐক্য প্রচেষ্টার ইতিহাস। বাংলাদেশ: কামিয়াব প্রকাশন লিমিটেড। পৃষ্ঠা ৭০। 
🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ২০২৪ কোপা আমেরিকারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরচন্দ্রবোড়াআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবাংলাদেশতরুণ রাম ফুকনকোপা আমেরিকাউয়েফা ইউরো ২০২৪কাজী নজরুল ইসলামশেখ মুজিবুর রহমানদ্রৌপদী মুর্মুএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)মিয়া খলিফাকল্কি ২৮৯৮ এডিসরকারলালসালু (উপন্যাস)রাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)শাকিব খানভূমি পরিমাপব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলছয় দফা আন্দোলনসিরাজউদ্দৌলাভারতফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাবাংলাদেশ রেলওয়েইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনআবহাওয়াবাংলা ভাষাউয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরবাংলাদেশের সাপের তালিকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধপ্রভিডেন্স স্টেডিয়াম