ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি (মিসর)

মিশরীয় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল

ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) ( আরবি: حزب الحرية والعدالة, প্রতিবর্ণীকৃত: হিজবুল হুররিইয়াহ ওয়াল 'আদালাহ) হল একটি মিশরীয় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। এই দলের হয়ে মিসরের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসি ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জিতেছিলেন,[৭] এবং ২০১১ সালের সংসদ নির্বাচনে এই দল অন্য দলের চেয়ে সবচেয়ে বেশি আসন জিতে। এটি নামমাত্র একটি স্বতন্ত্র দল, তবে মিশরের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে এর শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। [৮] ২০১৪ সালে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল; তবে এটি এখনও গোপনে কাজ করে চলেছে।

ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি
حزب الحرية و العدالة
চেয়ারম্যানসা'দ আল-কাতাদনি[১]
ভাইস চেয়ারম্যানইসাম আল-আরিয়ান
সেক্রেটারী জেনারেলহুসাইন ইব্রাহিম[২]
প্রতিষ্ঠা৩০ এপ্রিল ২০১১ (2011-04-30)
সদর দপ্তর২০ কিং আল-সালেম হামিদ সড়ক, রোদা আইল্যান্ড, কায়রো
সংবাদপত্রফ্রিডম এন্ড জাস্টিস
সদস্যপদ  (২০১১)৮৮২১[৩]
ভাবাদর্শইসলামপন্থা[৪][৫]
সামাজিক রক্ষণশীল
ধর্মীয় রক্ষণশীল
মিশ্র অর্থনীতি[৬]
রাজনৈতিক অবস্থানডান-পন্থা
আন্তর্জাতিক অধিভুক্তিমুসলিম ব্রাদারহুড
আনুষ্ঠানিক রঙ         Green, blue
স্লোগানআমরা মিসরের ভালো রাখি
(আরবি: نحمل الخير لمصر)
হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভ (মিসর)
০ / ৫৬৮
ওয়েবসাইট
www.fjponline.com

২০১১-১২ সালের মিশরীয় সংসদ নির্বাচনের ফলে এফজেপি দেশটির সংসদীয় নিম্নকক্ষের সমস্ত আসনের ৪৭.২ শতাংশ সিট জিতে, আর অন্যান্য ইসলামী দল আল নূর ও আল ওয়াসাত যথাক্রমে ২.৭ এবং ২ শতাংশ জিতে। [৯][১০][১১] এফজেপি এবং সালাফি আল নূর পার্টি উভয়ই কথিত রাজনৈতিক ঐক্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। [১২][১৩]

প্রথমে এফজেপি মূলত বলেছিল যে তারা ২০১২ সালের মিশরীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রার্থী দেবে না,[১৪][১৫] তবে বাস্তবে পরে তারা প্রার্থী দিয়েছিল। প্রথমে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা খাইরাত আল-শাতিরকে প্রার্থী করে তারা, কিন্তু তাকে নির্বাচন করার অযোগ্য ঘোষণা করার পরে তারা মুরসিকে প্রার্থী করে। [১৬] অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করে, কিন্তু এফজেপির অবস্থান তারা অস্পষ্ট রাখে। [১৭] ১৫ ই এপ্রিল ২০১৪, আলেকজান্দ্রিয়া কোর্ট ফর আর্জেন্ট ম্যাটার্স মুসলিম ব্রাদারহুডের বর্তমান এবং প্রাক্তন সদস্যদের সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। [১৮] ৯ ই আগস্ট, ২০১৪-এ সুপ্রিম প্রশাসনিক আদালত মুসলিম ব্রাদারহুডের ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি ভেঙে দেওয়ার এবং এর সম্পদের বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। [১৯]

ইতিহাস

সম্পাদনা

২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, মিশর বিপ্লবের পরে মুসলিম ব্রাদারহুড সা'দ আল-কাতাদনির নেতৃত্বে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠা করার অভিপ্রায় প্রকাশ করে। [২০]

দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ এপ্রিল ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তারা ঘোষণা করে যে তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তাদের দল ৬ জুন ২০১১-তে আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ অর্জন করে। [২১] মুসলিম ব্রাদারহুডের আইনসভা সংস্থা মোহাম্মদ মুরসিকে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির প্রেসিডেন্ট, ইসাম আল-আরিয়ানকে সহ-সভাপতি এবং সা'দ আল-কাতাদনিকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে নিয়োগ করে। [২২][২৩] এই তিনজন হলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের "গাইডেন্স অফিস" এর সাবেক সদস্য, বা মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের সর্বোচ্চ স্তর মক্তব আল-ইরশাদ এর সদস্য ছিলেন। [৮]

২০১১ সালের সংসদ নির্বাচনে যে আসনগুলি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, সেগুলোতে তারা "বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ" জয়লাভ করবে বলে আশা করা হয়েছিল - যেমন, অন্য কোনও দলের তাদের মত এতো বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমর্থক ছিলো না। এছাড়াও, মুসলিম ব্রাদারহুড স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে কাজ করেছিল। [৮] ২৪শে জুন, ২০১২ এ, এফজেপির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মুরসি, ৫১.৭৩% ভোট পেয়ে নির্বাচনের বিজয়ী হিসাবে ঘোষিত হন। এই পরে তিনি ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির প্রধান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

১৯ অক্টোবর ২০১২-তে অনুষ্ঠিত পার্টির কংগ্রেসে কাতাদনিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, আল-আরিয়ানকে সহ-প্রেসিডেন্ট এবং হুসেন ইব্রাহিমকে নতুন সেক্রেটারি-জেনারেল হিসাবে নির্বাচিত করা হয়।

২০১২ সালের শেষের দিকে, ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি আর গণতান্ত্রিক জোটের (Democratic Alliance coalition) অন্তর্ভুক্ত ছিল না। [২৪] আর ২০১৩ এর প্রথমদিকে, মিশরে "দুটি শিবিরের মধ্যে ক্রমশ বিভক্তি দেখা দেয়": একপক্ষে থাকে রাষ্ট্রপতি মুরসি আর "ইসলামপন্থী মিত্রদের" এবং আরেক পক্ষে থাকে "মধ্যপন্থী মুসলিম, খ্রিস্টান এবং উদারপন্থীরা"। [২৫]

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করে, আর এফজেপির ব্যাপারটা অস্পষ্ট রাখে;[১৭] আগস্ট ২০১৪ এ এফজেপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আদালত নিষিদ্ধ করে। [২৬]

কান্দিল সরকার (২০১২-২০১৩)

সম্পাদনা

৩০ জুন ২০১২-এর পরে, যখন মুরসি পঞ্চম এবং প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে মিশরের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করে, তখন ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি প্রধান সরকারী দল হয়। প্রধানমন্ত্রী হেশাম কানদিলের মন্ত্রিসভায়, ২২শে আগস্ট ২০১২ এ শপথ গ্রহণ করে, এফজেপি সরকারের বৃহত্তম দল হয়ে উঠে, যেখানে তারা গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ও অভিবাসন মন্ত্রণালয় সহ ৫ জন মন্ত্রী; মিডিয়া এবং যুব প্রতিমন্ত্রণালয় নিয়ে সরকারের বৃহত্তম দল হয়ে উঠে। ২৭ আগস্ট ২০১২ এ, মুরসি ২১ জন উপদেষ্টা এবং সহায়তাকারীর নাম ঘোষণা করেন যার মধ্যে তিনজন মহিলা এবং দুজন খ্রিস্টান এবং বিপুল সংখ্যক ইসলামপন্থী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আর দেশের ২৭ টি অঞ্চলে নতুন গভর্নর নিয়োগ দেন যাদের সবাই এফজেপি থেকে আগত ছিল।

রাজনৈতিক মঞ্চ

সম্পাদনা

এই দল সামাজিক ন্যায়বিচারের সাথে এক মিশ্র অর্থনীতির ব্যবস্থা সমর্থন করতো,[৬][২৭] তবে তা হতে হবে "বিকৃতি বা একচেটিয়াকরণ" ছাড়াই। দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পর্যটনকে জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [২৮]

ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি ইসলামী আইন ভিত্তিক দল ছিল, শীর্ষস্থানীয় মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্য ইসাম আল আরিয়ান বলেন যে "তবে জনগণের বিস্তৃত অংশের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য হবে," । [২৮] ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির সাথে সালাফীরা দ্বন্দ্ব হয়, যারা ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টিকে আদর্শচ্যুত হিসেবে বিবেচনা করে। [২৯]

২২ আগস্ট ২০১২-তে আল-আলম টিভিতে প্রচারিত একটি সাক্ষাত্কারে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির মিডিয়া উপদেষ্টা আহমদ সাবি বলেন, মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৭৯ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিগুলি মিশরীয় জনগণ , সিনাইয়ের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ এবং মিশরের সার্বভৌমত্বের জন্য লজ্জা জনক চুক্তি ছিল।

ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নেতাদের তালিকা।

সংখ্যাব্যক্তিঅফিসে
মোহাম্মদ মুরসি৩০ এপ্রিল ২০১১ - ২৪ জুন ২০১২
-ইসাম আল-আরিয়ান (ভারপ্রাপ্ত)২৪ জুন ২০১২ - ১৯ অক্টোবর ২০১২
সা'দ আল-কাতাতনি১৯ অক্টোবর ২০১২ - ৯ আগস্ট ২০১৪

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ কোপা আমেরিকাবিশেষ:অনুসন্ধানবিধানচন্দ্র রায়তুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকোপা আমেরিকাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলদক্ষযজ্ঞকাজী নজরুল ইসলামসিরাজউদ্দৌলামীর জাফর আলী খানবাংলাদেশশেখ মুজিবুর রহমানসাঁওতাল বিদ্রোহফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংসরকারলালসালু (উপন্যাস)বিরাট কোহলিব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলছয় দফা আন্দোলন২০২৪ কোপা আমেরিকা গ্রুপ এবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসিধু কানুএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)উয়েফা ইউরো ২০২৪বাংলা ভাষা আন্দোলনআবহাওয়ারোহিত শর্মারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)চন্দ্রবোড়াকল্কি ২৮৯৮ এডিআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতামিয়া খলিফাপলাশীর যুদ্ধসাইবার অপরাধপহেলা বৈশাখ