শেখর কাপুর
শেখর কুলভূষণ কাপুর (জন্ম ৬ ডিসেম্বর ১৯৪৫)[১] হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র[২] এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে তার কাজের জন্য পরিচিত। আনন্দ পরিবারের একজন কাপুর বলিউডে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে টিভি সিরিজখানদান তার পুনঃপুন ভূমিকা এবং ১৯৮৩ সালে কাল্ট বলিউড চলচ্চিত্র মাসুম দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে পরিচিতি লাভ করেন। মাসুম সেই বছর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করে।[৩] এরপর তিনি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্র মিঃ ইন্ডিয়া (১৯৮৭) দিয়ে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন।
শেখর কাপুর | |
|---|---|
 ২০০৮ সালে শেখর কাপুর | |
| জন্ম | শেখর কুলভূষণ কাপুর ৬ ডিসেম্বর ১৯৪৫ |
| জাতীয়তা | ভারতীয় |
| পেশা |
|
| দাম্পত্য সঙ্গী | মেধা গুজরা (বি. ১৯৮৪; বিচ্ছেদ. ১৯৯৪) সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তি (বি. ১৯৯৯; বিচ্ছেদ. ২০০৭) |
| সন্তান | ১ |
| ওয়েবসাইট | shekharkapur |
তিনি ১৯৯৪ সালের বলিউড চলচ্চিত্র ব্যান্ডিট কুইন দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন। এটি মালা সেনের কুখ্যাত ভারতীয় ডাকাত ও রাজনীতিবিদ ফুলন দেবীর জীবনী অবলম্বনে নির্মিত, যা সেই বছর শ্রেষ্ঠ হিন্দি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করে। এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীয় হয় ১৯৯৪ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইট বিভাগে এবং এরপর এডিনবার্গ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।[৪][৫]
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রানী এলিজাবেথের উপর তার ঐতিহাসিক জীবনীনির্ভর চলচ্চিত্র এলিজাবেথ (১৯৯৯) এবং এলিজাবেথ: দ্য গোল্ডেন এজ (২০০৬) দিয়ে তিনি প্রশংসিত হন, এবং প্রথমোক্ত চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ চলচ্চিত্র বিভাগে বাফটা পুরস্কার এবং দুটি চলচ্চিত্রই একটি করে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করে।[৬][৭][৮]
কাপুর একটি ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কারের পাশাপাশি এক ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও অর্জন করেন। ২০১০ সালে তিনি ৬৩তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি সদস্যদের একজন (আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৫][৯]
২০২০ সালে কাপুর ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানের বর্তমান সভাপতি হন।[১০]
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাশেখর কুলভূষণ কাপুর ডিসেম্বর ১৯৪৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কুলভূষণ কাপুর একজন ডাক্তার ও তার মাতা শীলকান্ত কাপুর।[১] সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা একটি ট্রেনে গণহত্যা সংঘটিত হয়; কাপুরের মা শীল মৃতের অভিনয় করে তাকে এবং তার বোনকে তার শরীরের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন।[১১] এর প্রতিফলন ঘটিয়ে কাপুর বলেছিলেন যে "একজন মানুষের রক্তের" মাধ্যমে ভারত বিভক্ত হয়েছিল।[১১]
বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা দেব আনন্দের ভাগ্নে হলেও তিনি তার বাবা তাকে চলচ্চিত্রে আসতে নিরুৎসাহিত করেন।[১২] শীলকান্ত অভিনেতা চেতন, দেব এবং বিজয় আনন্দের বোন ছিলেন। কাপুর তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে এবং তার তিন বোন রয়েছে। তার এক বোন, নীলু, অভিনেতা নবীন নিছোলের প্রথম স্ত্রী ছিলেন, অন্য বোন অরুণা অভিনেতা পরীক্ষিত সাহনির স্ত্রী। তার তৃতীয় এবং সবচেয়ে ছোট বোন সোহেলা কাপুর।
কাপুর নতুন দিল্লির মডার্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।[১৩] তিনি সেন্ট স্টিফেন কলেজে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার পিতামাতার নির্দেশে হিসাববিজ্ঞান অধ্যয়ন করে এবং ২২ বছর বয়সে, তিনি ইংল্যান্ডে আইসিএইডব্লিউ নিয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হন।[১৪][১৫]
কাপুর একটি বহুজাতিক তেল কোম্পানিতে কাজ করার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং হিসাবরক্ষক ও ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে কাজ করে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন।[১৬]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাকাপুর ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরালের ভাতিজি মেধা গুজরালকে বিয়ে করেন। তারা ১৯৯৪ সালে আলাদা হয়ে যান। মেধা পরে জনপ্রিয় ভজন গায়ক অনুপ জালোটাকে (তিনি তার তৃতীয় স্ত্রী) বিয়ে করেন। মেধা দ্বিতীয় হৃদপিণ্ড এবং প্রথম মূত্রনালী প্রতিস্থাপনের পর যকৃতের ব্যধিতে নিউইয়র্ক শহরের একটি হাসপাতালে ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর মারা যান।[১৭][১৮][১৯]
কাপুর এরপর ১৯৯৭ সালে ভারতীয় অভিনেত্রী, লেখক, চিত্রশিল্পী এবং গায়ক সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তিকে বিয়ে করেন। তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তাদের কাবেরী কাপুর নামে একটি মেয়ে আছে।
পুরস্কার
সম্পাদনা- নাগরিক সম্মান
- শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ চলচ্চিত্র বিভাগে বাফটা পুরস্কার - এলিজাবেথ (১৯৯৮)
- শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে বাফটা পুরস্কার - (মনোনীত) - এলিজাবেথ (১৯৯৮)
- শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার - (মনোনীত) - এলিজাবেথ (১৯৯৮)
- শ্রেষ্ঠ পরিচালক - এলিজাবেথ (১৯৯৮)[২১]
- শ্রেষ্ঠ হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (পরিচালক) - ব্যান্ডিট কুইন (1994)
- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার - মাসুম (১৯৮৩)
- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার - ব্যান্ডিট কুইন (১৯৯৪)
- শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার - ব্যান্ডিট কুইন (১৯৯৪)
শেখর কাপুরের চলচ্চিত্রের প্রাপ্ত পুরস্কার
সম্পাদনা| বছর | চলচ্চিত্র | একাডেমি পুরস্কার | বাফটা পুরস্কার | গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার | |||
|---|---|---|---|---|---|---|---|
| মনোনয়ন | জয় | মনোনয়ন | জয় | মনোনয়ন | জয় | ||
| ১৯৯৮ | এলিজাবেথ | ৭ | ১ | ১২ | ৫ | ৩ | ১ |
| ২০০৭ | এলিজাবেথ: দ্য গোল্ডেন এজ | ২ | ১ | ৪ | ১ | ||
| মোট | ৯ | ২ | ১৬ | ৫ | ৪ | ১ | |
- পরিচালিত একাডেমি পুরস্কার মনোনীত অভিনয়
| বছর | অভিনয়শিল্পী | চলচ্চিত্র | ফলাফল |
|---|---|---|---|
| শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার | |||
| ১৯৯৯ | কেট ব্লানচেট | এলিজাবেথ | মনোনীত |
| ২০০৮ | এলিজাবেথ: দ্য গোল্ডেন এজ | মনোনীত | |
চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনা| বছর | শিরোনাম |
|---|---|
| ১৯৮৩ | মাসুম |
| ১৯৮৭ | মিস্টার ইন্ডিয়া |
| ১৯৯৪ | ব্যান্ডিট কুইন |
| ১৯৯৮ | এলিজাবেথ |
| ২০০২ | দ্য ফোর ফিদার্স |
| ২০০৭ | এলিজাবেথ: দ্য গোল্ডেন এজ |
| ২০০৮ | নিউ ইয়র্ক, আই লাভ ইউ |
| ২০০৯ | প্যাসেজ (শর্ট ফিল্ম) |
| ২০১৬ | দ্য সায়েন্স অব কমপেশন (প্রামাণ্যচিত্র) |
| টিবিএ | হোয়াট্স লাভ গট টু ডু উইথ ইট? |
| বছর | শিরোনাম | ভূমিকা | মন্তব্য |
|---|---|---|---|
| ১৯৭৪ | ইশক ইশক ইশক | ||
| ১৯৭৫ | জান হাজির হ্যায় | ||
| ১৯৭৮ | টুটে খিলোনে | ||
| ১৯৭৯ | জিনা ইয়াহাঁ | ||
| ১৯৮০ | খঞ্জর | রমেশ | |
| ১৯৮৪ | বিন্দিয়া চমকেগি | রাজ এ কুমার | |
| ১৯৮৮ | ফালাক (আকাশ) | ইনস্পেক্টর জিমি | |
| ১৯৮৯-১৯৯১ | উড়ান | ||
| ১৯৮৯ | গাওয়াহী | ||
| ১৯৯০ | দৃষ্টি | নিখিল | |
| ১৯৯১ | নজর | প্রাচীন সামগ্রীর ব্যবসায়ী/অর্থ ঋণদাতা | |
| ১৯৯২ | সাতওয়াঁ আসমান | দেব | |
| ২০১৩ | বিশ্বরূপম | র এজেন্ট কর্নেল জগন্নাথ | তামিল চলচ্চিত্র |
| ২০১৩ | বিশ্বরূপ | হিন্দি | |
| ২০১৬ | তেরা সুরুর | রাজীব কৌল চরিত্রে - ভারতীয় রাষ্ট্রদূত | |
| ২০১৮ | বিশ্বরূপম ২ | র এজেন্ট কর্নেল জগন্নাথ | তামিল চলচ্চিত্র |
| ২০১৮ | বিশ্বরূপ ২ | হিন্দি |
| বছর | শিরোনাম | মন্তব্য |
|---|---|---|
| ১৯৯৮ | দিল সে। । | নির্বাহী প্রযোজক |
| ২০০২ | গুরু | নির্বাহী প্রযোজক |
| ২০১১ | বলিউড: দ্য গ্রেটেস্ট লাভ স্টোরি এভার টোল্ড | তথ্যচিত্র |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা
- ↑ ক খ "Shekhar Kapur: A life in focus"। The Times of India। ১৬ মার্চ ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১১।
- ↑ "John Travolta likely to star in Shekhar Kapoor's Paani"। The Hindu।
- ↑ "Shekhar Kapur: My uncle Dev Anand, the man no one knew..."। NDTVMovies.com।
- ↑ "Anurag Kashyap: 'The perception of India cinema is changing'"। Digital Spy।
- ↑ ক খ "Shekhar Kapur, exclusive interview"। Festival de Cannes।
- ↑ "Film in 1999"। BAFTA। ১১ এপ্রিল ১৯৯৯।
- ↑ "71st Academy Awards"। Academy of Motion Picture Arts and Sciences। ২১ মার্চ ১৯৯৯।
- ↑ "80th Academy Awards"। Academy of Motion Picture Arts and Sciences। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮।
- ↑ "'Harry Potter' Star Emma Watson to Make Bollywood Debut with Shekhar Kapur's 'Paani'?"। International Business Times। ১৪ মে ২০১৪।
- ↑ "Shekhar Kapur appointed FTII president"। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ ক খ "When Shekhar Kapur's mother played dead to save his life during partition" (ইংরেজি ভাষায়)। Hindustan Times। ১ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৯।
- ↑ Andrea LeVasseur (২০০৭)। "Shekhar Kapur"। Movies & TV Dept.। The New York Times। Baseline & All Movie Guide। ২১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১১।
- ↑ "Shekhar Kapur becomes a name to reckon with in Western cinema"। The Indian Express। ১৬ মার্চ ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১১।
- ↑ Wild, Damian (৫ অক্টোবর ২০০৩)। "Shehkar Kapur: Reeling in the punters."। Accountancy Age। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৩।
- ↑ Kapoor, Shekhar। "My uncle Dev Anand, the man no one knew…"। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৩।
- ↑ "Sorry"। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১১।
- ↑ "How Anup Jalota became third-time lucky"। www.telegraphindia.com।
- ↑ "Anup Jalota's wife passes away"।
- ↑ "Sad demise"। ৫ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "National Board of Review of Motion Pictures :: Awards"। Nbrmp.org। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১১।