সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা

সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা বা প্লসিবল ডিনায়াবিলিটি হল কোন ব্যক্তির কাছে থাকা অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিকর কার্যের দায়ভার অথবা জ্ঞানকে অস্বীকার করার ক্ষমতা, যদিও সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিকর কার্যটিতে জড়িত থাকতে পারেন বা সেই কার্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অজ্ঞ বা অন্ধ থাকতে পারেন। এখানে যার কাছে ক্ষমতাটি থাকে তা কোন জ্যেষ্ঠ্য কর্মকর্তা বা কোন আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক চেইন অব কমান্ড হতে পারে। আর যার ক্ষতিকর কার্যের দায়ভারকে অস্বীকার করা হয় তিনি সাধারণত কোন অর্গানাইজেশনাল হায়ারার্কি বা সংগঠনের ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগে থাকা অধীনস্থ হয়ে থাকেন। যদি অবৈধ বা কলঙ্কিত বা কোন অজনপ্রিয় কার্য পাবলিক বা সকলের কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়, তাহলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা কর্মকর্তাগণ নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য এবং দায়ভারটিকে সরিয়ে কার্যনির্বাহী এজেন্ট বা নিযুক্তককে চাপানোর জন্য সেই কাজ সম্পর্কে জানার ব্যাপারটি অস্বীকার করতে পারেন, কারণ তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, তাদেরকে যারা সন্দেহ করছেন তারা সেই কার্যে উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের জড়িত থাকার বিষয়টিকে প্রমাণ করতে পারবেন না। এই সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবই এই অস্বীকারকে সাম্ভাব্য বা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। এই শব্দটি সাধারণভাবে এক ধরনের দূরদর্শিতাকেও নির্দেশ করে, যেখানে ভবিষ্যতে কারও কোনকিছু করার বা জানার দায়ভারকে এড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কোন কোন সংগঠনে, বৈধ নীতি যেমন কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি থাকে যাতে কোন অধীনস্তের দোষযুক্ত কার্যসমূহের দায়ভার উক্ত সংগঠনটিকে না নিতে হয়, অথবা যাতে সংগঠনটি সেই কার্যে জড়িত হয়ে গেলেও আইনের দৃষ্টিতে তারা নির্দোষ থাকেন।

রাজনীতি এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে অস্বীকার্যতা দ্বারা কোন ক্ষমতাবান সত্তা বা কোন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এর বাক পাসিং (অন্য কোন ব্যক্তির উপর দায়ভার চাপানো) এবং ব্লোব্যাক (কোন ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির অনিচ্ছাকৃত ফলাফল) এড়িয়ে যাবার জন্য কোন গোপনে সংগঠিত কার্যের দায়ভারের অস্বীকার করাকে বোঝায়। এখানে কাজটি কোন তৃতীয় পক্ষের দ্বারা গ্রহণ করা হয় যার সাথে মেজর পার্টি বা প্রধান পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্য সম্পর্ক থাকে না। রাজনৈতিক প্রচারের ক্ষেত্রে, সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা প্রার্থীদেরকে পরিষ্কার থাকতে সাহায্য করে এবং তাদের কোন তৃতীয় পক্ষকে সমালোচনা করার সুযোগ দেয় যারা অন্যায্য উপায় গ্রহণ করে থাকে বা যাদের পক্ষে নিন্দাপূর্ণ কাজ করা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রে সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা একটি আইনগত ধারণা। এর দ্বারা কোন অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবকে নির্দেশ করা হয়। প্রমাণের আদর্শ বিভিন্ন নাগরিক এবং অপরাধি মামলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। নাগরিক মামলা বা সিভিল কেসের বেলায়, প্রমাণের আদর্শ হল "সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রাচুর্যতা", অন্যদিকে অপরাধী মামলা বা ক্রিমিনাল কেসের বেলায় এই আদর্শ হল "যৌক্তিক সন্দেহের মাত্রাকে অতিক্রম করা"। যদি বিরোধী পক্ষ, অভিযোগের পক্ষে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে সেই অভিযোগটি সত্য হলেও ব্যক্তি তার অভিযোগকে সাম্ভাব্য অস্বীকার (প্লসিবলি ডিনাই) করতে পারেন।

যদিও সমগ্র ইতিহাস জুড়েই সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার অস্তিত্ব ছিল, সি.আই.এ. ষাটের দশকে এই শব্দটির (প্লসিবল ডিনায়াবিলিটি) প্রথম ব্যবহার করে। সি.আই.এ. এর করা কোন অবৈধ বা অজনপ্রিয় কার্য পাবলিক হয়ে গেলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সে বিষয়ে জানার দায়ভার এড়ানোর বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য এই শব্দটিকে তারা ব্যবহার করে। এই শব্দটির গোড়া চলে যায় হ্যারি ট্রুম্যানের ১৮ই জুন,১৯৪৮ এর ন্যশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল পেপার ১০/২ এ যেখানে "কোভার্ট অপারেশন" বা "গুপ্ত অপারেশন"কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল "... সকল কার্যক্রম (উল্লিখিতগুলো বাদে) যা শত্রুভাবাপন্ন বৈদেশিক রাষ্ট্রে বা সংগঠনের বিরুদ্ধে থাকার জন্য অথবা পক্ষের রাষ্ট্র বা সংগঠনকে সাহায্য করার জন্য সরকারের দ্বারা পরিচালিত এবং স্পনসর করা হবে কিন্তু এগুলো এমনভাবে পরিকল্পিত বা নিষ্পন্ন হবে যে তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব কোন অননুমোদিত বা আনঅথোরাইজড ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট থাকবে না এবং যদি এটি প্রকাশিত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের সকল দায়ভারকে অস্বীকার করতে পারে।"[১] আইজেনহাওয়ারের প্রশাসনের সময় এন.এস.সি. ১০/২ কে আরও বিশেষায়িত করে এন.এস.সি. ৫৪১২/২ "কোভার্ট অপারেশনস" বানানো হয়।[২] ১৯৭৭ সালে এন.এস.সি. ৫৪১২/২ সম্পর্কে প্রকাশ করা হয়, এবং এখন এটি দেশটির ন্যাশনাল আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে।[৩]

ওভারভিউ

সম্পাদনা

সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার প্রধান ধারণা হচ্ছে স্বাম্ভাব্যতা। কোন সরকারী কর্মকর্তার পক্ষে কোন কাজের অস্বীকার করা খুবই সহজ, আর সেই ঘটনাটি ঘটবার পর ঘটনাটির সাক্ষ্যপ্রমাণকেও নষ্ট করে দেয়া বা ঢেকে দেয়া সম্ভব। আর এটাই তাদের উপর অপরাধের দোষারোপকে কাটানোর জন্য যথেষ্ট হতে পারে। যাইহোক, সাধারণ জনগণ এই অস্বীকারকে অবিশ্বাসও করতে পারে, বিশেষ করে যদি খুব শক্তিশালী অবস্থাগত সাক্ষ্যপ্রমাণ বা সারকামস্টেনশিয়াল এভিডেন্স থাকে, অথবা যা অস্বীকার করা হচ্ছে তা না ঘটার সম্ভাবনা এতটাই কম হয় যে কেবল যৌক্তিক ব্যাখ্যাই সেই অস্বীকারকে মিথ্যা প্রমাণ করে।

গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে এই ধারণাটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টেলিজেন্স বিভিন্ন উৎস্য থেকেই আসতে পারে, যার মধ্যে হিউম্যান সোর্সও আছে। মাত্র কয়েকজন ব্যক্তির কাছেই কোন তথ্য জানার অনুমতি আছে, এরকম ক্ষেত্রে কোন তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে সেই সুযোগপ্রাপ্ত লোকগুলোর কেউ কেউ প্রকাশিত হয়ে যান। উদাহরণস্বরূপ ধরুন, একজন কর্মকর্তা গোপনে কোন একটি জায়গায় আছেন, এবং তা কেবল তার একজন সহকারীই জানেন। ভ্রমণের সময় কর্মকর্তাটিকে গুপ্তহত্যা করা হল, আর গুপ্তহত্যার ঘটনাটি খুব শক্তভাবেই নির্দেশ করে যে গুপ্তঘাতক আগে থেকেই কর্মকর্তাটির ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন। এতে সাম্ভাব্য উপসংহার এটাই যে, কর্মকর্তাটির সহকারী কর্মকর্তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এখন সহকারীর সাথে গুপ্তঘাতকের সম্পর্কের কোন সরাসরি সাক্ষ্যপ্রমাণ নাও থাকতে পারে। কিন্তু এই ঘটনাটি কেবলই সেই সম্পর্কের দ্বারাই ব্যাখ্যা করা যায়। এক্ষেত্রে সহকারীর অস্বীকারটি অসম্ভাব্য হয়ে যায়।

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্লসিবলি ডিনায়াবল বা "সাম্ভাব্য অস্বীকার্য" কথাটি জনসম্মুখে প্রথম ব্যবহার করেন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (CIA) এর ডিরেক্টর এলেন ডালাস।[৪] কিন্তু এই সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার ধারণা আরও পুরনো। যেমন, ঊনিশ শতকে চার্লস ব্যাবেজ একটি কোম্পানিতে "কিছু সৎ মানুষের" গুরুত্ব বর্ণনা করেন। এদের গুরুত্বের কারণ হল, কোন ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো ঘটনার সময় যদি এদের অস্থায়ীভাবে সরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে কোন প্রশ্ন উত্থিত হলে, এদের কোন একজন প্রয়োজনে বলতে পারবেন, এই প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়টি ঘটেছে এরকম কোন মিটিং এর কথা কখনই তিনি শোনেন নি।[৫]

চার্চ কমিটি

সম্পাদনা

চার্চ কমিটি নামের একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সিনেট কমিটি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোতে তদন্ত পরিচালনা করে। এই তদন্তের সময় প্রকাশিত হয়, কেনেডি প্রশাসনের সময় সিআইএ অনেক বৈদেশিক নেতৃত্বকে গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা করে, যাদের মধ্যে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোও ছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নিজেই, যিনি এরকম কার্যের সাথে পরিষ্কারভাবেই জড়িত ছিলেন, তাকে অবশ্যই সরাসরিভাবে এই কাজটির সাথে জড়িত হলে চলবে না, যাতে তিনি বিষয়টির জ্ঞান সম্পর্কে অস্বীকার করতে পারেন। আর তখনই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য "প্লসিবল ডিনায়াল" বা "সাম্ভাব্য অস্বীকার" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।[৬] স্বাম্ভাব্য অস্বীকারের ক্ষেত্রে একটি পাওয়ার স্ট্রাকচার এবং চেইন অব কমান্ড এর সৃষ্টি করতে হয় যাকে আবার প্রয়োজনে অস্বীকার করার মত অনানুষ্ঠানিক বা আনঅফিশিয়ালও হতে হবে। এক্ষেত্রে ধারণাটি হল, সিআইএকে (বা অন্যান্য সংস্থা) কোন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি দ্বারা (রাষ্ট্রপতিও হতে পারে) বিতর্কিত নির্দেশ দেয়া যেতে পারে, কিন্তু প্রয়োজন পড়লে এই নির্দেশনার সঠিক উৎস্যকে অস্বীকার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন অপারেশন খুব খারাপভাবে ব্যর্থ হয়ে যায় এবং প্রশাসনের তার দায় অস্বীকার করার প্রয়োজন হয় তাহলে নির্দেশনার উৎস্যকে অস্বীকার করা হতে পারে।

চার্চ কমিটির আইনগত বাঁধা

সম্পাদনা

১৯৭৪ সালের হিউজ-রায়ান আইন সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার সমাপ্তি টানতে চেয়েছিল যার জন্য "সকল অপারেশন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ"- এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল। আবার ১৯৮০ সালের ইন্টেলিজেন্স ওভারসাইট আইন এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল সকল কোভার্ট অপারেশনের সম্পর্কে কংগ্রেসকে জানানো হবে। কিন্তু উভয় আইনেই এত অস্পষ্ট শব্দ এবং পালিয়ে যাবার রাস্তা ছিল যে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য আর বাস্তবায়িত হয় নি, যেমন ইরান-কনট্রা এফেয়ারে দেখা যায়। এর পরিণাম হিসেবে কংগ্রেসের (যুক্তরাষ্ট্রে সংসদ) সদস্যগণ উভয় সংকটে পড়ে যান, যখন তাদেরকে জানানো হয়, তারা কাজটি আর থামাতে পারবেন না, যদি না তার এর অস্তিত্ব প্রকাশ করে দেন এবং এর মাধ্যমে কোভার্টনেস বা গোপনীয়তার উপায় চিরতরে বন্ধ করে দেন।[৭]

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন

সম্পাদনা

ইরান-কনট্রা এফেয়ার

সম্পাদনা

চার্চ কমিটি স্বীকার করে যে, সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা ব্যবহার করে এন্টি-কাস্ত্রো পরিকল্পনায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনকে "অস্পষ্ট" করা হতে পারে। চার্চ কমিটি আরও ঘোষণা করে, সে ব্যাপারে জ্ঞানের পরিমাণ যাই হোক না কেন, রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার, কেনেডি এবং জনসনকে তাদের অধীনের কার্যের "চূড়ান্ত দায়" বহন করা উচিৎ।[৮]

সিআইএ কর্মকর্তাগণ রাষ্ট্রপতি এবং এজেন্সির বাইরের অন্যান্যদের সাথে কথা বলার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে এসপিয়ান ভাষায় কথা বলেছিলেন।[৯] রিচার্ড হেমস সাক্ষ্য দেন, তিনি কোন আনুষ্ঠানিক টেবিলে বসে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতিকে "হত্যা করা বা খুন করা" সম্পর্কে বলে "বিব্রত করতে" চাননি। প্রতিবেদনে পাওয়া যায় এই সারকামলোকিউশন[১০] বা পরোক্ষ ভাষার ব্যবহারটি নিন্দনীয়, এখানে বলা হয়: "কোন খারাপ কাজকে সঠিক নামে প্রকাশ না করা সেই খারাপ কাজটি ঘটবার সম্ভাবনাকে হয়তো বাড়িয়ে দিয়েছে"। কমিটি আরও প্রস্তাব করে, সিস্টেম অব কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণকে হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই দ্ব্যর্থক (দুটি অর্থ আছে এমন) রাখা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রপতি "সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার" সুযোগ নিতে পারেন।[১১]

পেছন থেকে যে জিনিসটি পরিষ্কারভাবে দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরতে বাঁধার সৃষ্টি করেছিল তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক অস্পষ্টতা এবং সারকামলোকিউশন বা পরোক্ষ ভাষার পরিশীলিত ব্যবস্থা, যেখান কোন কর্মকর্তাকেই, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের দায় চাপানো যায় না। অপ্রীতিকর আদেশসমূহ খুব কমই কাগজে কলমে পাওয়া যায়, এবং নথিতে এগুলো সম্পর্কে যা পাওয়া যায় সেগুলোর সবই "রিমুভাল", "দ্য ম্যাজিক বাটন"[১২] বা "দ্য রিসর্ট বিয়ন্ড দ্য লাস্ট রিসর্ট" রেফারেন্সে দেয়া। এভাবে কোন এজেন্সি উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের থেকে দেয়া নির্দেশনা বুঝতে ভুল করতে পারে, কিন্তু একে দেখে আরও বেশি করে মনে হয় যে, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দায়কে সহজ করে দেয়া হচ্ছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না, এটা প্রতীয়মান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাক্তন সিয়াইএ পরিচালক রিচার্ড হেমস কমিটিকে বলেন, "আপনারা সকলেই এ বিষয়ে জানেন, এই সব কাজে সবচাইতে কঠিন বিষয়টি হল, কেউই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে বিরক্ত করতে চান না।"[১৩]

ভাইস এডমিরাল জন পয়েনডেক্সটার ইরান-কনট্রা এফেয়ার বিষয়ক কংগ্রেশনাল কমিটিতে তার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, "আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই রাষ্ট্রপতিকে জিজ্ঞেস না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, যাতে আমি সিদ্ধান্তটি থেকে রাষ্ট্রপতিকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি, এবং যদি এটা ভবিষ্যতে কখনও প্রকাশিত হয়ে যায় তাহলে যাতে তিনি কিছু অস্বীকার্যতার সুযোগ নিতে পারেন।"[১৪]

প্রকাশিত সরকারী দলিল

সম্পাদনা
  • অক্টোবর ২৫, ১৯৬৩ সালের পেন্টাগন পেপারস: সাম্ভাব্য আকষ্মিক অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উপায় বিষয়ে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত হেনরি ক্যাবট লজ জুনিয়রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ সহকারী ম্যাকজর্জ বান্ডিকে দেয়া টেলিগ্রাম। এখানে একটি বিকল্প হিসেবে সাম্ভাব্য অস্বীকারের কথা বলা হয়।
  • ১৯৬৪ সালের চিলির নির্বাচন বিষয়ে গুপ্ত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত সিআইএ এবং হোয়াইট হাউজ দলিল প্রকাশিত হয়। পশ্চিম গোলার্ধ বিভাগের সিআইএ প্রধান জে.সি. কিং বলেন, "চিলির রাষ্ট্রপতি এডুয়ার্ডো ফ্রেই মন্তালভার পক্ষে এমন ভাবে তহবিল প্রদান করা হয়েছিল যাতে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল প্রদানকে অনুমান করা যায়, কিন্তু তারপরেও সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার একটি সুযোগ থাকে"।[১৫]
  • ১৯৫৪ সালে গুয়েতেমালার আকষ্মিক অভ্যুত্থান বিষয়ে সিআইএ এর কোভার্ট অপারেশন "অপারেশন PBSUCCESS" এর ট্রেইনিং ফাইল: ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ অনুসারে "অপারেশন PBSUCCESS এর ট্রেইনিং ফাইলে পাওয়া ও এজেন্সির দ্বারা প্রকাশ করা দলিলগুলোর মধ্যে একটি সিআইএ ডকুমেন্ট পাওয়া যায় যার নাম ছিল 'এ স্টাডি অব এসাসিনেশন' বা 'গুপ্তহত্যা সম্পর্কিত পাঠ'। এটি রাজনৈতিক হত্যা সম্পর্কিত একটি ১৯ পৃষ্ঠার গাইড বই ছিল যেখানে গুপ্তহত্যার পদ্ধতি, যন্ত্রপাতি এবং প্রয়োগ সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা লেখা ছিল।" এই গাইড বা ম্যানুয়ালে সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার জন্য বলা হয়, "গুপ্তহত্যার কোন নির্দেশনাকে কখনই লেখা বা রেকর্ড করা যাবে না।"[১৬]

ত্রুটিসমূহ

সম্পাদনা

এই নীতিটিতে কিছু বড় ভুল রয়েছে:

  • এটা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের জন্য একটি মুক্ত দুয়ার। এর জন্য এমন একটি অবস্থার সৃষ্টির দরকার হয় যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। এটি কোন ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার লাইসেন্স দেবারই সমান।[১৭]
  • এটার সাহায্য নিতে গেলে খুব কম সময়ই তা কাজ করে। যে অস্বীকার্যতাগুলোকে তৈরি করা হয় তা খুব কম সময়ই সাম্ভাব্য হয় এবং এগুলোকে সাধারণত গণমাধ্যম এবং জনগণ বুঝতে পারে।[১৮] ওয়াটারগেট ক্রাইসিস এর একটি অন্যতম কারণ ছিল সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা নীতির বারবার ব্যর্থ হওয়া, যেগুলোকে প্রশাসন বারবার রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন এবং তার সহকারীদেরকে স্ক্যান্ডালের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করে আসছিল।
  • সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা কেবল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং তাদের কর্মচারীদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি সংক্রান্ত ঝুঁকিই বৃদ্ধি করে।[১৯]
  • যদি দাবীটি ব্যর্থ হয়, এটা খুব ভালভাবেই রাজনৈতিক সত্তা বা ব্যক্তির মর্যাদাহানি ঘটায়, এক্ষেত্রে বলা হয়, "এটা কোন অপরাধ নয়, এটা কেবলই একটি আবরণ"।
  • যদি এটা সফল হয়, তাহলে এটি জনগণের মনে ধারণার সৃষ্টি করে, সরকার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেই।

অন্যান্য উদাহরণ

সম্পাদনা

সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতার অন্যান্য উদাহরণগুলোর মধ্যে আছে, কোন ব্যক্তির সক্রীয়ভাবে নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে না জানতে চাওয়া, কারণ না জানলেই ব্যক্তির উপকার হবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন এটর্নি সন্দেহ করতে পারেন যে, এমন কোন বিষয় থাকতে পারে যা তার মামলার ক্ষতি করবে। কিন্তু তিনি সেগুলোকে তদন্ত না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কারণ তিনি যদি আসল বিষয়টি সম্পর্কে জেনে যান তাহলে নৈতিকতার নিয়মগুলোর কারণে তাকে হয়তো বিপক্ষ দলের কাছে বিষয়গুলোকে প্রকাশ করতে হতে পারে। তাই তদন্ত করার এই ব্যর্থতায় সাম্ভাব্য অস্বীকার্যতা রক্ষিত হয়।

বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক পরিষদ

সম্পাদনা

"... যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কখনও কখনও নির্দিষ্ট অস্বীকার্যতার প্রয়োজন হতে পারে। প্রাইভেট এক্টিভিটি বা ব্যক্তিগত কার্যক্রমগুলো সেই অস্বীকার্যতা দান করতে পারে।" ২০০৩ সালের একটি প্রতিবেদনে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈদেশিক নীতি বিষয়ক থিংক ট্যাংক "কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন" থেকে নেয়া উক্তি। প্রতিবেদনটির নাম ছিল "ফাইন্ডিং আমেরিকাস ভয়েস: এ স্ট্র্যাটেজি ফর রিইনভিগোরেটিং ইউএস পাবলিক ডিপ্লোমেসি"।

থমাস বেকেট হত্যা

সম্পাদনা

বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রাজা দ্বিতীয় হেনরি, আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবেরি থমাস বেকেট সম্পর্কে বলেছিলেন, "কে আমাকে এই অনধিকারচর্চাকারী পাদ্রীর হাত থেকে নিষ্কৃতি দেবে?" পরবর্তীতে বেকেটকে হত্যা করা হয়, যদিও রাজা এর দায় অস্বীকার করে বলেন, তার কথাকে এভাবে নেবার মত কিছু ছিল না।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কে এর ব্যবহার

সম্পাদনা

কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অস্বীকার্যতা বলতে প্রায়ই এমন একটি অবস্থা বোঝায় যেখানে কোন ব্যক্তি একটি ফাইল পাঠানোর ব্যাপারকে অস্বীকার করতে পারেন, এমনকি যদি সেই ফাইলটি তার কম্পিউটার থেকে গিয়েছে বলে প্রমাণিত হয় তখনও।

সাধারণভাবে, এটা করা হয় স্বয়ংক্রীয়ভাবে কোন কম্পিউটারকে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের প্রচারকে রিলে করার মাধ্যমে (আসল প্রেরকদের কাছ থেকে ফাইল নিয়ে স্বয়ংক্রীয়ভাবে অন্যত্র প্রদান করা)। এরকম ক্ষেত্রে ফাইলটির আসল প্রেরককে কেবলই রিলেকারি বা পুনঃসম্প্রচারকারীদের থেকে পৃথক করা যায় না। এভাবে যে ব্যক্তি প্রথমে ফাইলটি প্রেরণ করেছিলেন তিনি দাবী করতে পারেন, তার কম্পিউটারটি কেবলই অন্য কোন জায়গা থেকে ফাইল পেয়ে রিলে করে দিয়েছে। সকল নেটওয়ার্ক কানেকশনের একটি পূর্ণ ডিক্রিপ্ট করা লগ ছাড়া এই দাবীটিকে অপ্রমাণ করা যাবে না।

ফ্রিনেট ফাইল শেয়ারিং

সম্পাদনা

ফ্রিনেট ফাইল শেয়ারিং নেটওয়ার্ক হল এই ধারণাটির আরেকটি প্রয়োগ। এটা এই নেটওয়ার্কের অপারেটর এবং ব্যবহারকারীদেরকে রক্ষা করার জন্য ডেটা সোর্স এবং এর প্রবাহকে অস্পষ্ট করে দেয়। আর এটা করা হয় এই অপারেটর ও ব্যবহারকারীকে (এবং সেন্সরদের মত পর্যবেক্ষকদেরকে) কোথা থেকে ডেটা আসছে এবং কোথায় জমা হচ্ছে তা জানা থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে।

ক্রিপ্টোগ্রাফিতে ব্যবহার

সম্পাদনা

ক্রিপ্টোগ্রাফিতে স্টেগানোগ্রাফিক টেকনিককে বর্ণনা করতে ডিনায়াবল এনক্রিপশন ব্যবহৃত হতে পারে, যেখানে একটি এনক্রিপ্টেড ফাইল বা বার্তার অস্তিত্ব অস্বীকার্য হয় যাতে প্রতিকূলতা এটা প্রমাণ করতে না পারে যে সেই এনক্রিপ্টেড বার্তার অস্তিত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে সিস্টেমকে "ফুললি আনডিটেক্টেবল" বা পূর্ণ অসনাক্তযোগ্য (FUD) বলা হয়।

কিছু সিস্টেম আরও অগ্রসর, যেমন MaruTukku, FreeOTFE এবং (একটু কম পরিমাণে হলেও) TrueCrypt এবং VeraCrypt যেগুলোতে এনক্রিপ্টেড ডেটা থাকে। এনক্রিপ্টেড ডেটাটির অধিকারী এখান থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্যকে ডিক্রিপ্ট করার জন্য একটি বা একাধিক কি (keys)-কে প্রকাশ করতে পারেন, এবং আরও অন্যান্য কি এর অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারেন। এই কথাটিকে এর সাথে জড়িত সকল কি বা চাবির জ্ঞান ছাড়া অপ্রমাণ করা যায় না। একটি স্পষ্ট এনক্রিপ্টেড ডেটার মধ্যে থাকা এই "লুকানো" ডেটার অস্তিত্বকে প্রমাণ করা যায় না, তাই এই চিন্তায় এই লুকানো ডেটাটি ডিনায়াবল বা অস্বীকার্য।

প্রোগ্রামিং

সম্পাদনা

"আন্ডারহ্যান্ডেড সি কন্টেস্ট" হল একটি বার্ষিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা যেখানে সতর্কভাবে ক্রাফট করা ডিফেক্ট বা নিপুনভাবে ত্রুটি তৈরি করা হয়। এই ডিফেক্টগুলোকে একই সাথে খুব কঠিন এবং কখনও ভুলটি ধরা পড়ে গেলে প্লসিবলি ডিনায়াবল বা অসাম্ভাব্য অস্বীকার্য হতে হবে। 

 আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

টীকা

আরও পড়ুন

বহিঃ সূত্র

সম্পাদনা
🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ কোপা আমেরিকাবিশেষ:অনুসন্ধানবিধানচন্দ্র রায়তুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকোপা আমেরিকাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলদক্ষযজ্ঞকাজী নজরুল ইসলামসিরাজউদ্দৌলামীর জাফর আলী খানবাংলাদেশশেখ মুজিবুর রহমানসাঁওতাল বিদ্রোহফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংসরকারলালসালু (উপন্যাস)বিরাট কোহলিব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলছয় দফা আন্দোলন২০২৪ কোপা আমেরিকা গ্রুপ এবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসিধু কানুএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)উয়েফা ইউরো ২০২৪বাংলা ভাষা আন্দোলনআবহাওয়ারোহিত শর্মারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)চন্দ্রবোড়াকল্কি ২৮৯৮ এডিআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতামিয়া খলিফাপলাশীর যুদ্ধসাইবার অপরাধপহেলা বৈশাখ